ভালো খাও, তরুন থাকো।
বুড়ো হয়ে যাওয়া বা বার্ধক্য (aging) হলো এক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যেখানে সময়ের সাথে সাথে শরীরের গঠন ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয় ও কার্যক্ষমতা কমে যায়। এই পরিবর্তনের কারনগুলো চলুন আমরা সহজভাবে দেখি:
1. জেনেটিক কারণ: জিনোম হলো কোনো জীবের সম্পূর্ণ জেনেটিক উপাদানের সমষ্টি। সহজভাবে বললে, এটি হলো সেই “ডিজাইন” বা নকশা, যেখানে একটি জীবের গঠন, বৃদ্ধি, কার্যপ্রণালি, এমনকি আচরণ সম্পর্কিত সব তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে। জীবের একটি দেহকোষে যে ডিএনএ (DNA) থাকে, সেই ডিএনএ-র মধ্যে থাকা সব জিন এবং জিন-বহির্ভূত অংশগুলো একসঙ্গে মিলিয়ে গঠন করে জিনোম।
আমাদের এই ডিএনএ (DNA)-তে এমন কিছু তথ্য থাকে, যা ঠিক করে দেয় আমাদের দেহ কতদিন পর্যন্ত সবল থাকবে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বা মধ্য বয়সে এসে আমাদের শরীরের কোষগুলি বড় আর মোটা হয়ে যায় । কোষের ঝিল্লির বা বাইরের পর্দার ভেদ্যতা কমে যায়, যার ফলে অক্সিজেন শোষন করার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে কোষের বিভাজনের হার কমে যায় এবং ক্রমশ কোষগুলো দুর্বল হতে থাকে।
এছাড়া আরও নানা কারন আছে যেমন -
2. টেলোমিয়ার ছোট হওয়া: টেলোমিয়ার হলো ক্রোমোজোমের শেষ প্রান্তে থাকা সুরক্ষা স্তর। প্রতিবার কোষ বিভাজিত হওয়ার সময় এই টেলোমিয়ার ছোট হতে থাকে। একসময় এটি এতটাই ছোট হয়ে যায় যে, কোষ আর বিভাজিত হতে পারে না, ফলে কোষ দুর্বল হয়ে পড়ে বা মারা যায়।
3. অক্সিডেটিভ স্ট্রেস: শরীরে বিপাক ক্রিয়ার সময় Free Radical নামে ক্ষতিকর উপাদান তৈরি হয়, যা কোষের গঠন এবং ডিএনএ-কে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে বার্ধক্য প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
4. হরমোনের পরিবর্তন: বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে হরমোনের মাত্রা কমে যায়। যেমন, গ্রোথ হরমোন, টেস্টোস্টেরন, এবং ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ হ্রাস পায়, যা ত্বকের ভাঁজ, পেশির দুর্বলতা এবং হাড় ক্ষয়ের মতো পরিবর্তন ঘটায়।
5. পরিবেশগত কারণ: দূষণ, ফ্রী রেডিক্যাল, অতিরিক্ত স্ট্রেস, অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং জীবনযাত্রা বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে।
এখন প্রশ্ন হল বায়লোজিক্যাল বয়স কমানো তো সম্ভব নয়, তবে চল্লিশের পরেও কি শরীর ও মনের দিক দিয়ে বিশ বছরের তরুনের মত যুবক এবং সুস্থ থাকা সম্ভব? Dr. David Sinclair, Professor of genetics at Harvard Medical School এর মতে, এটি খুবই সম্ভব। ওনার মতে, বয়সকালে আমাদের শরীরের অবস্থা ২০% জিনোমের ওপর এবং বাকি ৮০% এপিজিনোমের ওপর নির্ভর করে।
এবার আসি এপিজিনোম কি?
এপিজিনোম (Epigenome) ঠিক করে জিনোম কিভাবে কাজ করবে। সহজভাবে বলতে গেলে, এটি বলে দেয় কোন জিনটি সক্রিয় (on) হবে আর কোনটি নিষ্ক্রিয় (off) থাকবে। আরও সহজ কথায় জিনোম হল পিয়ানো আর এপিজিনোম হল পিয়ানোবাদক।
এপিজিনোম (Epigenome) কেন গুরুত্বপূর্ণ?
• এটি ব্যাখ্যা করে কেন যমজদের ডিএনএ একই হলেও তাদের আচরণ, স্বাস্থ্য বা রোগপ্রবণতা ভিন্ন হতে পারে।
• এপিজিনেটিক পরিবর্তন পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ ইত্যাদির দ্বারা প্রভাবিত হয়।
• ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, মানসিক অসুস্থতা বা বার্ধক্য প্রভৃতি রোগের সাথে এপিজিনেটিক পরিবর্তনের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
তাই বার্ধক্য হল এপিজিনোম এর অনিয়ম বা ব্যর্থতা যা বয়সকালে জিনকে ঠিকঠাক নিয়ন্ত্রন করতে পারে না। আবার, এপিজিনোম এর কাজ নিয়ন্ত্রন করে সার-টু-ইন্স(Sirtuins) যা সাতটি জিনের সমষ্টি ।
এই সার-টু-ইন্স (Sirtuins) কে নিয়ন্ত্রন করে আমাদের শরীরের NAD+ অনু। আমাদের শরীরের বয়স ৫০ পৌঁছানোর আগেই NAD+ অনু প্রায় ৫০% কমে যায়। ফলে, এপিজিনোম (Epigenome) ঠিকঠাক কাজ করতে পারে না বা জিনোমকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে না। যার জন্য আমরা আরও তাড়াতাড়ি বুড়ো হয়ে যাই।
তাহলে আমরা শরীরে NAD+ অনুর পরিমান বাড়িয়ে বা প্রতিদিন NAD+booster নিয়ে এপিজিনোমের কাজ করার ক্ষমতা বাড়াতে পারি। শরীরে NAD+ অনুর পরিমান বাড়ানোর জন্য NMN (Nicotinamide Mononucleotide) গ্রহন করতে হবে যা ভেঙ্গে শরীরে এনজাইম তৈরি করবে।
এক কথায় বয়স বাড়ার সাথে সাথে NMN (Nicotinamide Mononucleotide) প্রতিদিন নিতে পারলে আমরা বুড়ো হওয়ার প্রক্রিয়াকে ধীর করতে পারি বা ৫০ বছর বয়সে এসে আমরা শরীর বা মনের দিক দিয়ে ৩০ এর মত থাকতে পারি। তাই Dr. David Sinclair বা আরও অনেকে প্রতিদিন ১ গ্রাম করে NMN supplement হিসাবে খান। তাই খাদ্যাভাসের পরিবতর্নের মাধ্যমে আমরা তারুন্য ধরে রাখার চেষ্টা করতে পারি।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনঃ
যে সমস্ত খাওয়ারে NMN বেশি পরিমানে থাকে, তা নিচে দেওয়া হল -
1. সয়াবিন - 0.47–1.88 mg per 100g
2. ব্রকলি - 0.25–1.12 mg per 100g
3. বাঁধাকপি: ~0.9 mg per 100g
4. অ্যাভকাডো - ~0.36–1.60 mg per 100g
5. টম্যাটো - ~0.26–0.30 mg per 100g
6. শশা ~0.65 mg per 100g
7. মাশরুম ~1.01 mg per 100g
8. মাছ A source of NAD+ precursors
তাই, শরীরে তারুন্য ধরে রাখতে এই সমস্ত খাওয়ারগুলো প্রতিদিন বেশি করে খান।