by ঐশী

কাকের মত চেষ্টা , বকের মত ধ্যান

philsophy

কাকের মত চেষ্টা , বকের মত ধ্যান

কাকের মত চেষ্টা , বকের মত ধ্যান

একটি সংস্কৃত শ্লোক আছে - কাক চেষ্টা বক ধ্যানম স্বান নিদ্রা তথৈব চ, 
                                          স্বল্পাহারি গৃহত্যাগী  বিদ্যার্থী পঞ্চ  লক্ষম।

যিনি বিদ্যার্থী বা ছাত্র বা শিক্ষার্থী তা যে বয়সেই হোক না কেন, সে যদি শিক্ষা বা জ্ঞান অর্জন করতে চায়, এই  সংস্কৃত শ্লোক অনুসারে তার পাঁচটি গুন থাকা দরকার। 

১. কাকচেষ্টাঃ 'কাকচেস্টা'  মানে কাকের মত চেষ্টা বা কঠিন পরিশ্রম। আমরা ছোটবেলায় সবাই সেই কাকের গল্প পড়েছি। তৃষ্ণার্ত একটি কাক দেখলো একটি কলসিতে একটু জল রাখা আছে কিন্তু তা কলসির এতও নিচে যে তার ঠোঁট পৌঁছাবে না। কিন্তু সে এত তৃষ্ণার্ত যে সে সেই মুহূর্তে জল ছাড়া থাকতে পারবে না। তখন তার মাথায় একটি বুদ্ধি খেলে গেল এবং সে ছোট ছোট নুড়ি পাথর এনে কলসির মধ্যে ফেলতে লগলো। যতক্ষণ না জল কলসির মুখ পর্যন্ত উঠে এল, ততক্ষণ সে কষ্ট করে নুড়ি পাথর ফেলা চালিয়ে যেতে থাকল। কিছুক্ষণ পরে সে জল পান করে তেষ্টা মেটাল। 

জ্ঞানার্জনের জন্য বা শিক্ষা অর্জনের জন্য তাই এই কাকের মত চেষ্টা থাকা উচিত।

২. বকধ্যানমঃ 'বকধ্যানম' মানে বকের মত ধ্যান বা একাগ্রতা। বক যখন পুকুরে এক পায়ে দাঁড়িয়ে মাছ শিকার করে, তখন সে গভীর মনোযোগ দিয়ে জলের দিকে লক্ষ্য রাখে। জলের মধ্যে ছোট ছোট মাছগুলোকে ছেড়ে দিয়ে বড় মাছের দিকে লক্ষ্য রাখে। সুযোগ বুঝে বড় মাছটিকে খপ করে মুখে তুলে নেয়।

সেইরকমই শিক্ষার্থীর ছোট ছোট জিনিস যেমন কারও সাথে ছোট খাটো ঝামেলা, মনোমালিন্য, ছোট খাটো শরীর খারাপ এগুলোকে তুচ্ছ করে প্রধান বিষয়কেই যেমন পড়াশুনোকেই প্রাধ্যান্য দেওয়া উচিত।

৩. স্বন-নিদ্রাঃ 'স্বন' মানে কুকুর এবং 'নিদ্রা' মানে ঘুম। কুকুরের মত ঘুম হল শিক্ষার্থীর তৃতীয় গুন। কুকুর ঘুমের মধ্যেও খুব সতর্ক থাকে। কোনও আওয়াজ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে জেগে উঠে।

সেরকমই আমাদের লক্ষ্য প্রধান বিষয়ে থাকলেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন আশেপাশের কোনও জিনিস থেকে যদি কোনও মুল্যবান কিছু শেখার থাকে তা যেন আমাদের নজর না এড়িয়ে যায়। যদি আমরা সতর্ক থাকি তবে আমরা শেখার কোনও সুযোগ হাতছাড়া করব না।

৪. অল্পহারিঃ 'অল্প' মানে কম এবং 'আহার' মানে খাওয়ার বা খাদ্য। যারা শিক্ষার্থী তারা সর্বদা অল্প খাওয়ার গ্রহন করবে। বাস্তবে আমাদের নানারকমের খাওয়ার হয়- যেমন চোখের খাওয়ার হল দৃশ্য, কানের খাওয়ার হল শব্দ, জিভের বা মুখের খাওয়ার হল খাদ্য। যা আমরা দেখি, যা আমরা শুনি তা সবই আমাদের মনের মধ্যে একটা দাগ ফেলে দেয়। তাই আমরা পঞ্চইন্দ্রিয় দিয়ে যা খাই, বা দেখি বা শুনি তা সব সাবধানে বেছে বেছে অল্প পরিমানে গ্রহন করতে হবে, যাতে আমরা আমাদের মূল লক্ষ্য থেকে দূরে না সরে যাই।

৫. গৃহত্যাগিঃ যদিও বা 'গৃহত্যাগি' মানে ঘর ছাড়া বোঝায়, কিন্তু এক্ষেত্রে ঘরের আরাম ছাড়ার কথা বলা হয়েছে। উচ্চ লক্ষ্যের জন্য কষ্ট করতে বা আরাম ছাড়ার কথা বলা হয়েছে।   
 
তাই যে কোনও মানুষ বা ছাত্র যদি কোনও কিছু নিয়ে সাধনা করতে চান বা শিখতে চান তার এই পাঁচটি গুন ধীরে ধীরে অর্জন করা উচিত।